পাথরঘাটাপ্রতিবেদনবরগুনাবরিশালবাংলাদেশশিল্প ও বাণিজ্যসব

পাথরঘাটার বিদ্যুৎ সংকট দেশের মৎস্য খাতে ফেলছে চরম প্রভাব

পাথরঘাটার বিদ্যুৎ সংকট দেশের মৎস্য খাতে ফেলছে চরম প্রভাব

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটায়।

প্রতিনিয়ত লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের ভয়াবহ সমস্যায় ভুগছেন এই উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার বিদ্যুৎ-গ্রাহক। এর ফলে ঘরে ঘরে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে এবং শিল্প-কারখানাসহ দেশের অন্যতম মৎস্য খাতের ওপর পড়ছে চরম প্রভাব।

বর্তমানে ভান্ডারিয়া গ্রিড থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন হয়ে মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। মঠবাড়িয়া সাবস্টেশন ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিতে পারলেও, পাথরঘাটার চাহিদা ১৪ মেগাওয়াট হলেও পাচ্ছে মাত্র ১০ মেগাওয়াট।

দীর্ঘ লাইনে গাছ পড়া, ইনসুলেটর ভেঙে যাওয়া ও বৈরী আবহাওয়াজনিত কারণে লাইন ফল্ট ঘন ঘন ঘটে, যার ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে বারবার।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট পাথরঘাটায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ লেনদেন হয়। কিন্তু বিদ্যুতের অস্বাভাবিক সরবরাহব্যবস্থার কারণে সেখানে অবস্থিত ২৮টি বরফকল স্বাভাবিকভাবে বরফ উৎপাদন করতে পারছে না।

এতে মাছ সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে জেলেদের জীবিকা, স্থানীয় ব্যবসা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে।

 

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান সাহেদ বলেন, “জেলেরা মাছ ধরেই বাঁচে। কিন্তু বরফ না থাকায় মাছ সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে জেলেরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা পুরো দেশের জন্যই ক্ষতিকর।

আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, যেন বরগুনা সদর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরের পাথরঘাটায় সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।”

পাথরঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা মিলন বলেন, “৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বিদ্যুৎলাইন থাকা খুবই অস্বাভাবিক। গাছ পড়ে বা অন্য কোনো কারণে লাইন ফল্ট হলে পুরো উপজেলা অন্ধকারে চলে যায়।

এমনকি কোনো রকম নোটিশ বা মাইকিং ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে পাথরঘাটা বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম, আরিফ শাহরিয়ার ফাহাদ জানান, “ভান্ডারিয়া গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে দীর্ঘ লাইনের কারণে সমস্যা হচ্ছে।

তবে আশার কথা হলো, বরগুনা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পাথরঘাটায় সরাসরি ৩৩ কেভি নতুন লাইন নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে।

২–৩ মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি পাথরঘাটা উপকেন্দ্রকে ২০ এমভিএতে উন্নীত করার প্রকল্পও চলছে। আমরা গ্রাহকদের এই ভোগান্তির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

স্থানীয়দের দাবি, বরগুনা সদর থেকে পাথরঘাটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিষখালী নদীর ওপর দিয়ে টাওয়ার নির্মাণ করা হোক। এটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।

এটি শুধু একটি উপজেলার সমস্যা নয়, বরং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম মৎস্যভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। অবিলম্বে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তাই সরকারের প্রতি জোর দাবি পাথরঘাটার বিদ্যুৎ সংকটের স্থায়ী সমাধানে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

Back to top button

এড ব্লক এল্যার্ট

আমাদের সাইটি ভিজিট করতে দয়া করে আপনার ব্রাউজারের এড ব্লক এক্টেনশনটি বন্ধ করুন।