গল্পগ্রাম বাংলা
ছাবি দিয়ে মাছ ধরা
হারিয়ে যাচ্ছে ছাবি দিয়ে মাছ ধরার বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলের সংস্কৃতি। ছাবি আসলে ধর্মজালের ছোট রূপান্তর। বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলে খালের পাশে গড়ে ওঠা পরিবারগুলো জোয়ারে উঠে আসা নালাখালা ভরে যাওয়া পানিতে ছাবি দিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরে। দুটি বাঁশের কঞ্চির সাথে ঘরের পরিত্যাক্ত কাপড় কঞ্চির চারকোনে টেনে বেধে ছাবি তৈরি হয়ে যায়। ছাবির মধ্যে সামান্য কুড়া ও মাটি মিশিয়ে হাটু পানিতে ফেলে রাখা হয়। গৃহিনী বা বাড়ন্ত মেয়েরা সময় সুযোগ মত সন্তর্পনে ছাবি উপরে তুলে নিয়ে আসে। কুড়া খেতে আসা মাছ সহজে ধরা পড়ে ছাবিতে। একটি কলার তাজা খোল দুভাজ করে খোলের পাশের সামান্য অংশ ছিঁড়ে উপরটায় বেধে তৈরি হয় কলার খোলের খাড়োই। ছাবিতে ধরা পরা মাছ কুড়িয়ে জমা করে এই পাত্রে। কিছুক্ষণ পরপর ছাবি তুলে পরিবারের প্রয়োজন পরিমান মাছ সংগৃহিত হলে ঘরে নিয়ে আসে। ছাবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে আশপাশ থেকে তুলে আনা শাক বা তরকারি রান্না হয় এই মাছ দিয়ে। টাটকা শাক-সবজি ও তাজা মাছের এই খাবার গ্রামীণ ভোজনের নিয়মিত অংশ হিসেবে চলে আসছিলো।
কত সুন্দর, স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রকৃতিনির্ভর আমাদের জীবন ছিলো। কর্মঠ শক্তিশালী দেহ গঠনে বাড়িতে উৎপন্ন খাবার ছিলো। বাড়িতে উৎপাদনের জন্য নারীদের কাছে সংরক্ষিত বীজ ছিলো। বাংলা দিনপঞ্জি মেনে বারোমাস শাক-সবজি ফলাতো। এর ফলে মেধা-মননে, শরীরে-স্বাস্থ্যে, শ্রদ্ধায়-মমতায়, যৌথ পরিবারের আদরে-নৈতিকতায় আমরা বেড়ে উঠছিলাম। আজ তথাকথিত আধুনিকতার কড়ালগ্রাসে এই সংস্কৃতি বিলুপ্ত প্রায়। হে প্রযুক্তি, ফিরিয়ে দাও আমার সেই সংস্কৃতি!!