সাংবাদিকদের জানার সুযোগ কমাচ্ছে স্বাস্থ্যঅধিদপ্তর
প্রথমে বন্ধ হলো রোজকার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ। তারপর বাদ পড়ল মজুত থাকা শনাক্তকরণ কিটের তথ্য। তারও পরে ছাঁটাই হলো কেন্দ্রভিত্তিক নমুনা পরীক্ষার দৈনিক হিসাব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য জানার সুযোগ সীমিত করছে। সাংবাদিকেরা কোনো তথ্য খতিয়ে দেখলেই এমনটা হচ্ছে। এটা শুরু হয়েছে এপ্রিলের গোড়া থেকে, যখন কিনা প্রতিদিন দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
অধিদপ্তর তথ্য দেয় সংক্ষেপে। বিফ্রিংয়ে প্রশ্ন করে সাংবাদিকেরা বিশদ তথ্য আর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চাইতেন। প্রশ্নোত্তর বন্ধ হওয়ায় সে সুযোগ কমেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষকে সঠিক তথ্য ও বার্তা দিতে হবে। না জানলে এবং আস্থা হারালে মানুষ রোগ শনাক্ত করতে বা চিকিৎসা নিতে যেতে চায় না।
নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নোত্তরের সুযোগ বন্ধ হয়েছে
দুটি তথ্য বাদ পড়েছে
সবই চলতি মাসে, সংকট বাড়ার সময়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক সহ-উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য সরবরাহে ধারাবাহিকতা না থাকলে বিভ্রান্তি হয়। তথ্যে মানুষের আস্থা হয় না, ভয়ভীতি কাটে না। সঠিক তথ্য স্বচ্ছ রীতিতে জানালে মানুষ আশ্বস্ত হয়।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং শুরু করে। তথ্য উপস্থাপন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা।
সংক্রমণের আশঙ্কায় ২৩ মার্চ থেকে অনলাইনে ব্রিফিং হচ্ছে। ৬ এপ্রিল পেশাজীবীদের এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে নতুন ২৯ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছে ৪ জন। আর মীরজাদী সেব্রিনার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংখ্যাগুলো ছিল ভিন্ন। সাংবাদিকেরা জানতে চান, কার তথ্য সঠিক।
৭ এপ্রিল থেকে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ বন্ধ হয়। ব্রিফিংয়ের নাম হয় ‘দৈনন্দিন স্বাস্থ্য বুলেটিন’। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির আদলে করা বুলেটিনের ছকে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য থাকে।
এগুলোর মধ্যে আছে, প্রতিদিন পরীক্ষা, আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। আছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা, ‘লজিস্টিক’ মজুত ও সরবরাহ আর কোয়ারেন্টিন ও বিচ্ছিন্নকরণ-সংক্রান্ত তথ্য। আরও আছে বিদেশ প্রত্যাগতদের স্ক্রিনিং এবং মোবাইল ফোনে সেবাদানের তথ্য।
লজিস্টিক-এর ঘরে আগে শনাক্তকরণ কিটের রোজকার হিসাব থাকত। এখন শুধু পিপিইর মজুত ও বিতরণের তথ্য থাকে। ১১ এপ্রিলের পর থেকে অধিদপ্তর কিটের কোনো হিসাব দিচ্ছে না।
টানা ১৪-১৫ দিন হালনাগাদ তথ্য না পেয়ে সাংবাদিকেরা বিষয়টি নিয়ে লেখেন। তারপর ২৬ এপ্রিল বুলেটিন প্রকাশের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, কিটের কোনো সংকট নেই। মজুত পর্যাপ্ত। তবে তিনি সংখ্যাটা বলেননি।
দেশে এখন ২৭টি ল্যাবরেটরিতে শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। দিনে মোট কমবেশি ৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু এযাবৎ সর্বোচ্চ হয়েছে ৪ হাজার ৩৩২টি।
অধিদপ্তরের বুলেটিনে কেন্দ্রভিত্তিক দৈনিক নমুনা পরীক্ষার হিসাব থাকত। তারপর সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন বেরোয় যে কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা অনেকটাই ব্যবহৃত হচ্ছে না। ২৪ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য উধাও হয়ে গেছে। শুধু দুই ভাগে ঢাকার বাইরে ও ঢাকার ভেতরের হিসাব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঁচ সদস্যের একটি মিডিয়া সেল গঠন করেছে। এই সেল কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম-সংক্রান্ত তথ্য ও বক্তব্য জানানোর ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার’ হলে সেটার জন্যও ব্যবস্থা নেবে।
মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খানের মতে, ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য চাপা দেওয়া হচ্ছে না। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রতিদিন কিটের মজুত লাখের ওপরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
আর রশীদ-ই-মাহবুব বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত একটি সুনির্দিষ্ট প্রটোকল বা রীতি অনুসরণ করে মানুষকে করোনা পরিস্থিতির সব তথ্য দেওয়া।