নিজস্ব প্রতিবেদক
পাথরঘাটার উপকূলীয় অনেক এলাকায় এখনো শুকায়নি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর ক্ষত। পার হয়নি ছয় মাসও। এরই মধ্যে আবারও বড় একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ এর সম্মুখীন হতে হচ্ছে পাথরঘাটা অঞ্চলের মানুষকে। আগামীকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই পাথরঘাটার আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে।
গত বছর পরপর দুটি বড় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে হয়েছে পাথরঘাটার মানুষকে। মে মাসের শুরুর দিকে আঘাত হানা ‘ফণীতে’ খুব বেশি ক্ষতি না হলেও ‘বুলবুলে’ ক্ষতি হয়েছে বেশ। একই বছরের ১০ নভেম্বর প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হানে ‘বুলবুল’। ওই ঝড়ের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় , পাথরঘাটার এলাকায় অনেক ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই মাস। এরই মধ্যে পাথরঘাটার মানুষকে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার। আম্পানের শক্তি দেখে ইতিমধ্যে আবহাওয়া অফিস থেকে একে বলা হচ্ছে ‘সুপার সাইক্লোন’।
আম্পানের প্রভাবে সকাল থেকেই পাথরঘাটার আকাশে মেঘ ঘণীভূত হচ্ছে। বইতে শুরু করেছে হালকা বাতাস। আর এমন পরিস্থিতিতে উপকূলীয় এলাকায় মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
এদিকে সরকারি আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৯টার দিকে আম্পান মোংলা বন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ২২৫ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়া বেগে ২৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টি ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে। আগামীকাল বিকেলের দিকে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে সেটি আঘাত হানতে পারে। এখনো মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ৬ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে ঝড়ের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী ওই সংকেত আরও বাড়বে। ঝড়টি ইতিমধ্যে সিডরের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ঝড়ের প্রভাবে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঝড়ের প্রভাবেই সকাল থেকে পাথরঘাটার আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে। হালকা বাতাসও বইছে। এর প্রভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। আগামীকাল সকাল থেকে দমকা বাতাস শুরু হতে পারে। আর দুপুর নাগাদ শুরু হতে পারে বৃষ্টি।
এদিকে পাথরঘাটা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এই সময়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। খাদ্যসামগ্রীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। ঝড়ের সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া উপজেলায় পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন।