আন্তর্জাতিকপ্রতিবেদনবরগুনা

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২২

শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত মানুষদের সাক্ষরতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৬৫ সালের ৮-১৯ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলনে সাক্ষরতা দিবস পালন বিষয়ক আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে প্রথম এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রতি বছর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে আসছে।

‘স্বাক্ষর’ শব্দের অর্থ দস্তখত। ‘স্বাক্ষর’ করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি শুধুমাত্র নাম দস্তখত করতে পারেন। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যুক্ত মুদ্রিত বা লিখিত উপকরণ পড়তে পারা, বোঝা, নিজের মতো ব্যাখ্যা করা, লিখতে পারা, যোগাযোগ এবং গণনা করার দক্ষতাকে সাক্ষরতা বলে। সাক্ষরতা মানুষকে লক্ষ্য অর্জন করতে, জ্ঞান এবং সম্ভাবনা বিকাশ করতে এবং বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম করার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সাক্ষরতার অভাবে মানুষ অনিরাপদ কর্মস্থলে কাজ করতে বাধ্য হয়, ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয় এবং নানাবিধ সামাজিক বঞ্চনার শিকার হয়।
বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার হার গত ৫০ বছরে ক্রমবর্ধমান হারে এগিয়েছে। ২০২১ সালে ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকস (ইউআইএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে বিশ্বে সাক্ষরতার হার ছিল ৮৫.৬০% যা ২০২০ সালে ৮৬.৬৮%-এ উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার এই হার গড় উন্নয়ন নির্দেশ করলেও তা লিঙ্গ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রকৃত অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে না। একই ভাবে বিগত দশকে বাংলাদেশের বয়স্ক সাক্ষরতা হার প্রায় ৭৮%-এ উন্নীত হলেও এখনো লিঙ্গ, পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেকেই সাক্ষরতা অর্জন করতে পারেনি।
এই পরিসংখ্যান থেকে সরকার, শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের জন্য সামনে বিশাল কাজ অবশিষ্ট রয়েছে তা নির্দেশ করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, বিশেষ করে লক্ষ্য ৪.৬ অর্জনে একটি বিশাল পদক্ষেপ নেওয়া, বিশেষ করে সমস্ত যুব এবং প্রাপ্তবয়স্করা যেন ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এলক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে সাক্ষরতা অর্জনের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান বা কমিউনিটি পর্যায়ের লার্নিং সেন্টারসমূহের সমন্বিত উন্নয়ন প্রয়োজন।
সাক্ষরতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। ইউনেস্কো কর্তৃক নির্ধারিত এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ঞৎধহংভড়ৎসরহম খরঃবৎধপু খবধৎহরহম ঝঢ়ধপবং, যার বাংলা ভাবন্তর হলো- সাক্ষরতা শিখন ক্ষেত্রের প্রসার।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক প্রয়োাজন মেটানোর জন্য, বিশেষ করে ঈঙঠওউ-১৯-এর সময়ে, বৈশ্বিক, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল আনুষ্ঠানিক মৌলিক এবং উচ্চ শিক্ষার ধারাবাহিকতা, এবং সম্পূর্ণ বা আংশিক ডিজিটাল সাক্ষরতা শিক্ষার স্থানগুলিতে পরিবর্তন আনা। শিক্ষাকে পরিবর্তনের একটি সক্রিয় মাধ্যম বিবেচনায় এটিকে আরও অর্ন্তভুক্তিমূলক করা এবং মানসহ সমতার বিষয়গুলি বিবেচনা করে সাক্ষরতা শিক্ষার স্থানগুলিকে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন দ্য ফিউচার অফ এডুকেশন (২০২১) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ভবিষ্যতকে রূপান্তরিত করার জন্য বৈশ্বিক স¤প্রদায় এবং জাতীয় পর্যায়ে সরকারেরর পক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রসারে মৌলিক বিষয়াবলী, যেমন বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটে প্রবেশগম্যতা বাড়াতে হবে, বিশেষ করে যুব ও প্রাপ্তবয়সস্কদের মধ্যে যারা দারিদ্র্য, লিঙ্গ পরিচয়, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, জাতিসত্তা, ভাষার বৈচিত্র্য, প্রতিবন্ধীতা এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অসুবিধার সম্মুখীন হয় তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
কোভিড-১৯ প্রতিঘাত কাটিয়ে উঠা, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার পর কিছু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় ফিরে আসতে পারছে না। এরূপ পিছিয়ে পরাদের জন্য আমাদেরকে বিদ্যমান শেখার স্থানগুলিকে সমৃদ্ধ এবং রূপান্তর করতে হবে যা জীবনব্যপী শিক্ষা ও সাক্ষরতা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করতে সহায়ক হবে। অর্থাৎ লিভারেজ, অ্যাডাপ্ট এবং ট্রান্সফর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে সাক্ষরতা শেখার স্থান পরিবর্তন করার জন্য নিচের বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে:
সক্ষমতা বৃদ্ধি/ লিভারেজ: শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক সাক্ষরতা কেন্দ্রের প্রসার এবং অধিকহারে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সাক্ষরতা কেন্দ্র স্থাপন।
অভিযোজন: সবার জন্য ন্যায্যতা ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন।
প্রসার: সাক্ষরতা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসন উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে শিখন সংস্থানের উন্নয়ন।
সাক্ষরতা একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দেশের উন্নতি নিরক্ষর ব্যক্তি উপভোগ করতে পারছেন না। ফলে তার কাছে সেই উন্নয়ন চোখে পড়ছে না।প্রতিটি দেশই আগে শতভাগ বা তার কাছাকাছি সাক্ষর হয়েছে, তারপর উন্নতি করেছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করার কথা বলছে। সরকার বড় বড় প্রকল্প দিয়ে সাক্ষরতার হার বাড়াতে পারবে না আমরা যদি সৎ ও দায়িত্বশীল না হই। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য দেশের সাক্ষরতার হার বাড়ানো দরকার। আর এই সাক্ষরতার হার বাড়াতে সবার প্রচেষ্টাও জরুরি। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সৎ ও স্বচ্ছ থাকি, দায়িত্ববান হই; তাহলেই বাংলাদেশ বদলে যাবে এবং সে পথে চলাই হবে মঙ্গলজনক।

Back to top button

এড ব্লক এল্যার্ট

আমাদের সাইটি ভিজিট করতে দয়া করে আপনার ব্রাউজারের এড ব্লক এক্টেনশনটি বন্ধ করুন।